গল্প লিখি

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বাংলা - Bangla - সাহিত্য পড়ি সাহিত্য লিখি | NCTB BOOK

তোমার দেখা বা শোনা কোনো ঘটনা অবলম্বন করে একটি গল্প রচনা করো। লেখা হয়ে গেলে দলে ভাগ হয়ে নিজেদের গল্প নিয়ে আলোচনা করো।
তোমার লেখা গল্পের ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর জবাব দাও:

  • তোমার গল্পের বিষয় কী?
  • গল্পের কাহিনি কী নিয়ে?
  • গল্পে কী কী ঘটনা ঘটেছে?
  • গল্পে কোন কোন চরিত্র আছে?
  • চরিত্রের মুখের সংলাপগুলো কোন ভাষারীতিতে লেখা?

গল্প কী

বাস্তব বা কাল্পনিক বিষয় নিয়ে গদ্য ভাষায় রচিত কাহিনিকে গল্প বলে। গল্পের কাহিনির মধ্যে এক বা একাধিক ঘটনা থাকে। ঘটনা তৈরি হয় চরিত্রের বিভিন্ন রকম কাজকর্ম ও ভূমিকার মধ্য দিয়ে। গল্পের চরিত্রকে জীবন্ত করার জন্য চরিত্রের মুখে প্রায়ই সংলাপ যোগ করা হয়।
গল্পের এক বিশেষ শ্রেণিকে বলে ছোটোগল্প। ছোটোগল্পের আয়তন সাধারণত ছোটো হয়। ছোটোগল্পের কাহিনি যে কোনো ঘটনা থেকে শুরু হতে পারে, আবার হঠাৎ করে শেষ হয়ে যেতে পারে। ছোটোগল্প পড়ার পরে পাঠকের কিছুটা অতৃপ্তি তৈরি হতে পারে-মনে হতে পারে আরেকটু পড়তে পারলে ভালো লাগত।

গল্প পড়ি ১

রিজিয়া রহমান (১৯৩৯-২০১৯) বাংলাদেশের একজন গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম 'ঘর ভাঙা ঘর', 'উত্তর পুরুষ', 'রক্তের অক্ষর', 'বং থেকে বাংলা' ইত্যাদি। নিচে লেখকের 'অলিখিত উপাখ্যান' উপন্যাসের খানিক অংশ দেওয়া হলো।

অলিখিত উপাখ্যান

রিজিয়া রহমান

অরণ্য কেটে বসতি স্থাপন করছে মানুষ। সুন্দরবনের দীর্ঘ গাছের ডালপালার জটাজাল সূর্যকে বর্ম-ঢাকা সেনাদলের মতো প্রতিহত করে। আলো ঢুকতে পারে না স্যাঁতসেঁতে মাটির বুকে। হিন্তাল বনে ব্যাঘ্র পরিবার নির্বিঘ্নে বিচরণ করে। বন্য শূকর, নীলগাই, বুনো মহিষেরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। হরিণের পালের ঘুরের শব্দ তীব্র গতিতে বাতাসের নৈঃশব্দ্য ভঙ্গ করে। জোয়ার স্ফীত আরণ্যক নদীর কুমির ডাঙায় উঠে রোদ পোহায়। গাছের ডালে শরীর জড়িয়ে মাথা দোলায় অজগর। বিচিত্র ভয়াল সুন্দরবন। সেখানে বেজে ওঠে উপনিবেশবাদী মানুষের কণ্ঠস্বর। অসংখ্য কুঠারের শব্দ বনের পশুকে সচকিত করে। জঙ্গলে ঝড় তুলে ছুটে পালায় হরিণের দল।

দুপুরের সূর্যের আলো বনের মধ্যে ঢুকতে না পারলেও তার আভায় বনভূমি আলোকিত। হাতির পিঠে দুলতে দুলতে জঙ্গল কাটার কাজ তদারক করছিল হেনরি। অনেকদিন হয়ে গেল সে লোকজন নিয়ে জঙ্গল কাটতে এসেছে। সঙ্গে এসেছে হাতি মহারাজ। তাঁর প্রিয় ঘোড়া হাওয়ার্ড। আরো এসেছে পঞ্চাশ জন মজুর। এরা সবাই মোরেলদের কয়েদখানার কয়েদি। কয়েদিরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেইজন্য প্রত্যেকের পায়ে পরানো আছে লোহার শিকল। এছাড়া রয়েছে ঠিকাদার। আর আছে মোহন খাঁ। যাকে কয়েদিরা সাহেবের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অবাধ্যদের শাস্তি দেবার ভয়াবহ নৃশংস সব কলাকৌশল জানা আছে তার। দিনকয়েক আগে কয়েকজন কয়েদি জঙ্গল কাটা ফেলে মধুর চাক ভাঙতে গিয়েছিল, কঠিন শাস্তি দিয়েছিল মোহন খাঁ। মৌচাকের নিচে আগুনের ধোঁয়া দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল মৌমাছিদের। আর সেই ক্রুদ্ধ মৌমাছির ঝাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল অপরাধীদের। মৌমাছির কামড়ে পরদিন তাদের চোখ-মুখ-শরীর ফুলে এমন বীভৎস চেহারা হয়েছিল যে, হেনরিই তাদের চিনতে পারেনি। দুদিন আগে এক কয়েদি জঙ্গল কাটা ফেলে বসেছিল। ঠিকাদারের চাবুক পড়েছিল তার ওপরে। ঠিকাদার চাবুক মারতে মারতে চিৎকার করে গালাগাল দিচ্ছিল-তোদের কি এখানে বসে হাওয়া খাবার জন্য আনা হয়েছে। নবাবের মতো হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছিস!

কয়েদিটা ক্ষীণ কণ্ঠে বলেছিল-বড়ো পানির পিপাসা। সারাটা দিনে মাত্র তিনবার খাবার পানি পাই। তেষ্টায় যে বুকটা শুকিয়ে থাকে। কুড়োল চালাতে পারি না।

ঠিকাদার খেঁকিয়ে উঠেছে-ওঃ কী আমার নবাবপুত্তুর রে। ঘন্টায় ঘণ্টায় পানির গেলাস চাই। জানিস, মিঠা পানি কত দূর থেকে আনতে হয়?

লোকটাকে পানি দেওয়া হয়নি। দুদিন পর পর লোক পাঠিয়ে দূরের গ্রামের দিঘি থেকে ভারায় করে খাবার পানি আনতে হয়। সুতরাং বেহিসেবি খরচ করে পানি শেষ করলে এই লবনাক্ত এলাকায় খাবার পানি পাওয়া যাবে কোথায়! লোকটাকে লাথি মেরে দাঁড় করিয়ে দিল ঠিকাদার-ওঠ, গাছ কাট।

কিছুটা দূরে তাঁবুতে বসে হেনরি বন্দুক পরিষ্কার করছিল। ডেকে জিজ্ঞসা করল-এই ঠিকাদার! কী হয়েছে? গোলমাল কেন ওখানে?

দোর্দন্ড প্রতাপের ঠিকাদার সঙ্গে সঙ্গে একেবারে আভূমি নত হয়ে গেল-দেখুন হুজুর! এই ব্যাটা কাজে ফাঁকি দিয়ে বসে বসে আরাম করছে। ঘড়ি ঘড়ি আবার পানি চাই নবাবজাদার।

হেনরি বন্দুক থেকে চোখ না তুলে বলল-এত মিঠা পানি দেয়া যাবে না। টাইনের আগে কেউ পানি পাবে না। তখনি চাকর বড়ো গ্লাসে পানি এনে ধরল হেনরির সামনে। হেমন্ত শেষ হয়ে গেছে। তবু এই বনের মধ্যে ভ্যাপসা গরম! বন্দুক সাফ করতে করতে হেনরি ঘেমে উঠেছিল। পানির গ্লাসটা মুখের কাছে ধরতেই দেখল, দূর থেকে তৃষ্ণার্ত কয়েদিটা কেমন লোলুপ জ্বলজ্বলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হেনরির পানির গ্লাসের দিকে। মাথাচাড়া দিল বিবেক। আর বোধ হয় সেই বিবেকের নির্দেশকে অবদমিত করবার জন্য ভীষণ রাগ উঠল হেনরির শরীর বেয়ে। রাগবিকৃত কন্ঠে চিৎকার করে উঠল হেনরি মোরেল-ঠিকাদার!

ঠিকাদার ছুটে এলো-হজুর।
হেনরি এক চুমুকে পানির গ্লাস শূন্য করে বলল- ওকে ধরে নদীর পানি খাইয়ে দাও।
ঠিকাদার শিকল পরা লোকটাকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেল খালের পাড়ে-খা। এই খালের পানি খেয়ে তোর বুক ঠান্ডা কর।

লোকটাকে চেপে ধরে সুন্দরবনের ঘোলা লবণাক্ত পানির কাছে নিয়ে গেল ঠিকাদার। কিছুটা ভয়ে এবং প্রচণ্ড তুফায় সেই কাদাছোলা লবণ বিশ্বাদ পানি আঁজলা ভরে খেল লোকটা।

চমৎকার আত্মপ্রসাদে তাঁবুর দড়ির বোনা চেয়ারে বসে হাসল হেনরি মোরেল। এইসব ঠিকাদার, মোহন খাঁ, দুর্গাচরণ আর মোরেলদের পোষা লাঠিয়াল পাইক বরকন্দাজদের মতো আজ্ঞাবহ দাসবৎ লোকগুলো আছে বলেই স্বল্পসংখ্যক শ্বেতাঙ্গ, এই বিরাট দেশকে পদানত করে রাখতে পেরেছে।

সারা বন কুড়ালের শব্দে মুখর। হিন্ডাল হোগলা আর উলুখড়ের বন নিঃশেষ হচ্ছে। বড়ো বড়ো গাছ কুড়ালের ক্রমাগত আঘাতে প্রাচীন ডাইনোসরের মতো আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ছে। এগিয়ে চলেছে মানুষ। এগিয়ে চলেছে সভ্যতা। এখানে মোরেলদের আবাদ চলবে। ফসল ফলবে। গড়ে উঠবে মনুষ্য বসতি। মহারাজ গলার ঘণ্টার শব্দ ছড়িয়ে এগিয়ে চলেছে। আবাদি এলাকার কাজ পরিদর্শনে বেরিয়েছে সাহেব হেনরি। আগে-পিছে ঘোড়ায় চলছে মোহন খাঁ আর কালু বাওয়ালি। কালু বাওয়ালি নামকরা শিকারি। একবার বাঘের সঙ্গে খালি হাতে লড়াই করছিল সে। দুপাশে কয়েদিরা একজন ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে গাছ কাটছে। কুড়ালের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ঝন ঝন করে শব্দ তুলছে তাদের পায়ের শিকল। হেনরি হাতির ওপর বসে বলল-এই: আজকের মধ্যে এই এলাকাটা সাফ করতে হবে। বুঝলি?

বশংবদ ঠিকাদার মাথা কাত করে বলল-আজে হজুর।
তারপর কাঠ কাটা দলের ওপর চাবুক ঘোরাল-হাত চালা। হাত চালা সব।
শৃঙ্খলিত মানুষগুলোর হাতের কুঠার আঘাত করছে বনভূমির নিস্তব্ধতায়। ফটকের সামনে এলো হেনরি। জঙ্গলে এসে প্রথমেই এই বাসস্থান তৈরি করিয়েছে সে। অনেকটা জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। বড়ো বড়ো সুন্দরী গাছ দিয়ে বিশ ফুটের মতো উঁচু বেড়ায় ঘিরে ফেলা হয়েছে চারদিক। কোনো বন্য জীব-জন্তু সুন্দরী গাছের বেড়ার দেয়াল টপকে যাতে ভেতরে ঢুকতে পারে না। এর মধ্যেই গোলপাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কয়েদিদের থাকবার চালা। ঠিকাদারদের ঘর। মহারাজ আর হাওয়ার্ডের আস্তাবল। ফটকের ভেতর ঢুকে মহারাজ হাঁটু মুড়ে বসল। পিঠের ওপর থেকে নেমে পড়ল হেনরি। কাঠের তৈরি বিরাট ফটক সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। লম্বা ভারী দুটো গাছ আড়াআড়ি করে হুড়কোর মতো বেঁধে দেয়া হয় ভেতর থেকে। সুন্দরবনের পাজি জানোয়ার বন্য মহিষের দল অবশ্য ভয়ংকর শক্তিশালী। একজোট হয়ে ধাক্কা মারতে শুরু করলে ফটক ভেঙে পড়তে পারে। তাই কয়েদিরা পালা করে সারা রাত বসে ফটকের কাছে আগুন জ্বালিয়ে পাহারা দেয়। বন্য জন্তুর সাড়া পেলে ক্যানেস্তারা পিটিয়ে চিৎকার করে। তাঁবুতে এসে ঢুকতেই একজন ঠিকাদার ছুটে এলো-সাহেব হজুরা এদিকে যে মহা বিপদ হয়েছে। 

হেনরি ফিরে দাঁড়াল-কী হয়েছে?
ঠিকাদার চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে বলল-হুজুর, পশ্চিম দিকের বনে কয়েদিরা কাজ করছিল। ঝোঁপের ভেতর থেকে একটা দাঁতাল বুনো শুয়োর বেরিয়ে একজন কয়েদির উরু চিরে ফেলেছে। সবাই হৈ হৈ করে ওঠায় শুয়োরটা পালিয়েছে। এখন কয়েদিরা কাজ করতে ভয় পাচ্ছে। ওদের পায়ে শিকল লাগানো, ছুটতে পারে না। গাছে উঠতে পারে না। খুব ভয় পাচ্ছে ওরা। আর যে লোকটার উরু চিরে গেছে সে তো অজ্ঞানের মতো পড়ে আছে। ভীষণ রক্ত ঝরছে।

হেনরি চিন্তিত হলো। ঘটনাটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। দু-চারজন ঠিকাদারের হাতে বন্দুক দিয়েছে বটে হেনরি, তবে সেটাও কতটা নিশ্চিন্ত হবার মতো কে জানে। বন্দুক যতটা না বন্য জন্তু মারবার জন্য তার চেয়ে বেশি কয়েদিদের ভয় দেখাবার জন্য। বাঘ, বুনো মহিষ, বন্য শূকর আশেপাশেই রয়েছে। জঙ্গলে আসবার কয়েক দিনের মধ্যেই তো গোটা পাঁচ-সাত কয়েদি শেষ হয়েছে। দুজনকে সাপে খেয়েছে, একজনকে খালের পাড় থেকে কুমিরে টেনে নিয়েছে। বুনো মহিষ শিঙে বাঁধিয়ে নিয়ে গেল একজনকে। আর দুজনকে হিন্তাল বন কাটবার সময়ে বাঘে খরেছে। কিন্তু কী করা যায়। এমনিতেই মজুরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তার ওপর পায়ের শিকল খুলে দিলে তো সব কটাই পালাবে। মজুরদের কাটা বড়ো বড়ো গাছ পেছনে বেঁধে টেনে আনছে মহারাজ। সেদিকে তাকিয়ে হেনরি গম্ভীর হয়ে বলল-আজ ঐ সেকশানের কাজ বন্ধ থাক। যার পা কেটেছে, সে লোকটা কোথায়?

ঠিকাদার বলল-ওখানেই পড়ে আছে। হেনরি খুব বিরক্ত হলো। সে এসেছে অ্যাডভেঞ্চার আর স্পোর্টসের নেশায়। তার মধ্যে এসব কী ঝঞ্জাট। হেনরি মোহন খাঁকে আর কালু বাওয়ালিকে পাঠিয়ে দিল লোকটাকে চালায় নিয়ে আসবার জন্য। ওরা চলে যেতেই দড়ির চেয়ারটায় বসে পড়ল। চাকরকে হুকুম করল খানা লাগাতে। দড়ির চেয়ারের সামনে দুটো তরুণ বিছিয়ে খানার টেবিল লাগাল চাকর। দুজন চাকর হেনরির আদরের ঘোড়া হাওয়ার্ডের দলাইমলাই করছে। মহারাজকে একটা আন্ত কলাগাছ দেয়া হয়েছে খেতে। এদিকে কলাগাছ পাওয়া যায় না। বনের ধারে বাওয়ালিদের যে গ্রাম আছে। সেটাও এখান থেকে দুই ক্রোশ। হেনরির লোকেরা সেখান থেকে মজুরদের রেশন, পানীয় জল, ঘোড়ার দানা আর কলাগাছ সংগ্রহ করে আনে। দুপুরের শেষ প্রহরেই বনের চারধারে ছায়া ছায়া অন্ধকার নেমেছে। মজুরদের চালাঘরের সামনে মাটির চুলো করে বড়ো খাঁড়িতে চাল-ডাল মিলিয়ে মজুরদের খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। একবারই রান্না করা হয়। রাতে খাবার পর বাসি খিচুড়ি সকালে খেয়ে সবাই কাজে যায়। লাভের পর পা ছাড়িয়ে শরীর এলিয়ে দিল হেনরি।

তাঁবুর পরদার সামনে মোহন খাঁ এসে দাঁড়াল। সাহেব ঘুমিয়েছেন মনে করে সে চলে যাচ্ছিল। হেনরি চোখ খুলে ডাকল কী খবর মোহন খাঁ?
মোহন ভেতরে এলো-সাহেব। লোকটা বোধ হয় বাঁচবে না। পায়ের দুধারের মাংস বেরিয়ে পড়েছে, রক্তও থামছে না। কী করা যায় এখন!

হেনরি বলল-কী করা যাবে আর। মরে গেলে ফেলে দিয়ে আসতে হবে।
মোহন বলল-কালু অবশ্য কীসব লতা-পাতার রস লাগিয়ে দিয়েছে। ওদিকে আবার আর একটাকেও আজ বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। বোধ হয় আগের বাঘটাই মানুষের রক্তের স্বাদ পেয়েছে, এখন রোজই মানুষ ধরবে।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। দলে দলে মজুরেরা পায়ের শিকলের শব্দ তুলে ফটক দিয়ে ঢুকছে। কুড়াল হাতে ধরা কালো লোকগুলোর মুখে ভীষণ আতঙ্কের ছাপ।

হেনরি বলল- তাহলে কী করা যায় বলো মোহন খাঁ। যতটুকু জঙ্গল কাটবার প্ল্যান নিয়ে এসেছি আমরা, তার চার আনাও তো কাটা হয়নি। এখন কাজ বন্ধ করে রাখা তো ঠিক হবে না।

মোহন প্রবল আপত্তিতে মাথা ঝাঁকাল-না না কাজ বন্ধ করা যাবে না। দরকার হলে ফিরে গিয়ে আরো কিছু লোক ধরে আনব আমরা।

বাইরের ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জঙ্গল থেকে জীবজন্তুর বিচিত্র সব ডাক শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ মেঘ গর্জনের মতো শব্দ করে বাঘ ডাকল। হেনরি আর মোহন খাঁ দুজনেই সচকিত হয়ে দৃষ্টি বিনিময় করল। মোহন বলল-বাঘটা বোধ হয় শিকার নিয়ে ধারে-কাছেই আছে।

হেনরি হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়াল-বাঘটাকে শিকার করতে হবে। ম্যান ইটার যখন হয়ে গেছে, তখন ঘন ঘন হানা দেবে। কাল সকালে চলো, কোনো চিহ্ন দেখতে পাই কিনা। তাহলে মাচা বাঁধব।

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion